সিফিলিসঃ কি, লক্ষণ, কারণ প্রতিকার
সিফিলিস
সিফিলিস একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ সংক্রমণ যা যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। ট্রেপোনেমা পেলিডাম নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এই রোগটির শুরু হয় একটি বেদনাহীন ঘা বা ফুড়া থেকে। এই ঘা বা ফুড়া সাধারনত জননেন্দ্রিয়, মলদ্বার বা মুখে হয়ে থাকে। এটি একটি সংক্রামক রোগ যা একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়।
প্রাথমিক অবস্থায় এটি শরীরের মাঝে অকার্যকর অবস্থায় থাকতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে সিফিলিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তখন একটি ইঞ্জেকশন বা অ্যান্টিবায়োটিকই যথেষ্ট। চিকিৎসা করা না হলে এই রোগটি আপনার হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক অথবা অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। এটি অনেক সময় জীবন-মরণ ব্যাধি হয়েও দাঁড়ায়। আবার সিফিলিসে আক্রান্ত মা থেকে আগত সন্তানের মধ্যেও এটা ছড়াতে পারে।
লক্ষণ
সিফিলিসের লক্ষণগুলো তেমন একটা বোঝা যায় না। কারণ সিফিলিসের বিভিন্ন ধাপ আছে যেগুলো বার বার পরিবর্তন হয়। যার ফলে আপনার সিফিলিস কোন ধাপে আছে বা আপনার আদৌ সিফিলিস আছে কিনা তা বোঝা খুবই কষ্টসাধ্য। অনেক সময় দেখা যায় যে একজন মানুষ কয়েক বছর ধরে সিফিলিসে আক্রান্ত, কিন্তু তার এখনো কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি।
সিফিলিসের প্রকারভেদ
সিফিলিসের সাধারনত চারটি ধাপ রয়েছে। আর একটি ভিন্ন প্রকারের সিফিলিস আছে যা বাচ্ছাদের হয়ে থাকে । নিচে আলোচনা করা হলো।
প্রাথমিক সিফিলিস
সিফিলিস হওয়ার প্রথম সংকেত হচ্ছে ঘা, একে শাংকুরও বলা হয়। ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরের যে অংশ দিয়ে প্রবেশ করবে সেখানেই ছোট ঘা হবে। বেশিরভাগ সময়ই একটিমাত্র ঘা হয়, অনেক সময় একাধিকও হতে পারে। এই অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে একটি ইঞ্জেকশন বা কিছু এন্টিবায়োটিক খেলে সিফিলিস ভালো হয়ে যাবে।
মাধ্যমিক সিফিলিস
চিকিৎসা না করালে প্রথম ঘা আপনি আপনি শুকিয়ে যাবে। কিন্তু ভিতরে এর ব্যাকটেরিয়া থেকে যাবে। ঘা শুকিয়ে যাওয়ার কিছু সপ্তাহের মধ্যে আপনার সমস্ত শরীরে ফুসকুরি দেখা দিবে, এমনকি হাতের তালু ও পায়ের নিচেও ফুসকুরি দেখা দিবে। এই ধাপের আরো কিছু ব্যতিক্রম ধর্মী লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন, পেশিতে ব্যথা, জ্বর, গলা ব্যাথা ইত্যাদি।
প্রচ্ছন্ন সিফিলিস
এই ধাপে লক্ষণগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে। কয়েক বছর পর্যন্ত এইভাবে থাকতে পারে। এর পর রোগের চিকিৎসা না করা হলে সেটি পরবর্তি ধাপ অর্থাৎ শেষ ধাপে উন্নিত হবে।
টারশিয়ারি বা শেষ ধাপ
যারা সিফিলিসে আক্রান্ত তাদের প্রায় ১৫-৩০% লোক এই ধাপে উন্নিত হয়। এটি হচ্ছে সিফিলিসের চরম অবস্থা। এই ধাপে উন্নিত হওয়ার পরই আসলে বোঝা যায় সিফিলিস আসলে কতটা মারাত্মক রোগ। এই পর্যায়ে রোগটি আপনার মস্তিষ্ক, স্নায়ু, চোখ, হৃদযন্ত্র, রক্তনালী, যকৃত, হাড়, জোড়া ইত্যাদির এমন ক্ষতি করে ফেলবে যা আপনার ভাবনার উর্ধেধ।
সহজাত সিফিলিস
এটি নবাগত বাচ্চাদের হয়ে থাকে, যদি মায়ের সিফিলিস থাকে। এদের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না তবে পরবর্তিতে ফুসকুরি দেখা দিতে পারে।
সিফিলিস যেভাবে ছড়ায়
এটি একটি সংক্রামক রোগ, তাই এটি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়। সিফিলিস আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সাথে যৌনক্রিয়ায় অংশগ্রহন করলে এটি ছড়ায়। অনেকসময় সন্তান জম্মের সময়ও এই রোগ বাচ্চার মধ্যে ছড়ায়, যদি মা এই রোগে আক্রান্ত থাকেন। অস্বাভাবিক যৌনমিলন, ছেলের সাথে ছেলে, একাধিক মানুষের সাথে যৌনমিলন, HIV আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলন ইত্যাদির ফলে সিফিলিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
একই টয়লেট, কাপড়, থালা-বাসন, বাথটাব, অথবা একই সুইমিংপুল ব্যবহার করলে সিফিলিস ছড়ায় না।
সিফিলিস হলে যা হতে পারে
সিফিলিসের ভয়াবহতা খুবই বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলোঃ
১। স্ট্রোক,
২। হার্ট অ্যাটাক
৩। চুল পড়া
৪। ধাতু দূর্বলতা
৫। কানে কম শোনা
৬। টিউমার
৭। রক্তনালী ক্ষত হওয়া
৮। হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি।
১। স্ট্রোক,
২। হার্ট অ্যাটাক
৩। চুল পড়া
৪। ধাতু দূর্বলতা
৫। কানে কম শোনা
৬। টিউমার
৭। রক্তনালী ক্ষত হওয়া
৮। হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি।
ডাক্তার কখন দেখাবো
যখনই আপনি অথবা আপনার সঙ্গির অথবা আপনার শিশুর শরীরের মূত্রদার, মলদ্বার, মুখে বা শরীরের কুচকিপূর্ণ এলাকায় ঘা বা ফুসকুড়ি দেখেন তবে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরনাপন্ন হন।
প্রতিরোধ
সিফিলিসের কোনো টিকা নেই। তাই এর হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে সতর্কতা। সতর্ক হয়ে চললে এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। যেমন,
১। একজনের বেশি কারো সাথে যৌনমিলনে অংশ না নেওয়া।
২। কনডম ব্যবহার করা, যাতে ঘা সঙ্গীর শরীরে না লাগে এবং রোগটি সংক্রমণ না হয় ইত্যাদি।
No comments