মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
মানসিক স্বাস্থ্য
আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ উপাদান হলো স্বাস্থ্য । এই স্বাস্থ্য আবার দুই প্রকার। শারীরিক স্বাস্থ্য আর মানসিক স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন ।
আজ আমরা জানব কিভাবে আমাদের মানসিক সাস্থ্যের উন্নতি করব। আসুন জেনে নেই ১০টি টিপস যার সাহায্যে আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারব।
১। শারীরিক ব্যায়ামঃ
শারীরিক ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরে অক্সিজেনের চলাচল দ্রুত হয়। এটি আপনার স্মৃতি শক্তি, যুক্তি সঙ্গত চিন্তাধারা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২। অধিক বই পড়াঃ
জ্ঞান বৃদ্ধির সবথেকে উৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে বইপড়া। যদিও আমরা বইপড়া থেকে ফেইসবুকের স্ট্যাটাস পড়তে বেশি ভালোবাসি। আমরা আজ অফলাইন থেকে অনলাইনে বেশি সময় দেই। তাই অনলাইনে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে পড়াশুনা করতে পারি। এর ফলে আমাদের মেধার বিকাশ ঘটবে এবং বড়কিছু চিন্তা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
৩। সুষম খাবার খাওয়াঃ
বেশি বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। সাথে সবুজ শাক-সবজি, দুধ জাতীয় খাবার, ডিম, মাংস ইত্যাদি বিটামিন-বি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খাওয়া উচিত। বিটামিন-বি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষের বিকাশ ঘটায়।
৪। প্রয়োজনীয় ঘুমঃ
অতিরিক্ত কাজের চাপ মস্তিষ্কে কর্টিসোলের মত ক্ষতিকর হরমোন নির্গমন করে যা রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই আমাদেরকে প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। রাতে বেশি সময় ধরে ঘুমানো উত্তম। কিন্তু কোনো কারণে রাতে ঘুম কম হলে আমাদের উচিত দিনের বেলা অবসর সময়ে কিছু ঘুমিয়ে নেওয়া।
৫। মানুষের সাথে মেশাঃ
ভাবতেছেন হয়ত এইটা আবার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে। আশ্চর্য্যজনক হলেও অনেকাংশেই কথাটা সত্য। আমাদের একটা খুবই খারাপ স্বভাব রয়েছে। আমরা এখন বেশিরভাগ সময়ই একা থাকতে পছন্দ করি। আর তখন আমাদের সঙ্গি থাকে হয় মোবাইল আর না হলে কম্পিউটার। যার ফলে আমরা বাস্তবিক দিয়ে একাকিত্ত বোধ করি। তাই আমাদেরকে অতিরিক্ত সময় একা না থেকে কোনো না কোনো মানুষের সাথে থাকা উচিত। এতে আমাদের মধ্য থেকে একা থাকার প্রবণতা কমে যাবে। আর যদি আমরা আমাদের বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সাথে যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করি বা কতাবার্তা বলি, তাহলে তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হবে। সাধারনত আমরা যখন আমাদের আপনজনদের সাথে কথা বলি তখন আমাদের ভালো লাগে। কারণ তখন আমাদের শরীর থেকে সেরাটোনিন নামক হরমোন নিশ্রিত হয়। এই হরমোনের ফলে আমাদের মধ্যে আনন্দ অনুভুত হয় এবং আমাদের মধ্যে যদি বিষন্নতা থাকে তবে সেটা দুরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আর যেকোনো জিনিস নিয়ে লম্বা আলোচনা করলে আমাদের মস্তিষ্ক চিন্তা, গবেষনা ইত্যাদি করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৬।ধ্যানঃ
শারীরিক ব্যায়াম করার পাশপাশি আমাদের অল্প সময় ধ্যান করা উচিত। যেকোনো ভালো জিনিস নিয়ে ধ্যান করা যেতে পারে। এতে মস্তিষ্ক শান্ত হবে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
৭। নতুন জিনিস শেখাঃ
মনোঃবিশেষজ্ঞরা বলেন নতুন নতুন জিনিস জানা ও শিখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের উন্নতি হয় এবং যেকোনো জিনিস মস্তিষ্কে ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৮। হাসি-খুশি থাকাঃ
একটা জিনিস খেয়াল করবেন, যেসব মানুষ সবসময় হাসি, আড্ডায় মেতে থাকে তাদের মানসিক চাপ কম থাকে। তার মানে এই নয় যে আপনি সারাদিন হাসি-তামাশায় মেতে থাকবেন। মানুষের সাথে জোকস বা মজার মজার গল্প শেয়ার করুন অথবা তাদের কাছ থেকে শুনেন। এতে করে মস্তিষ্ক সতেজ হবে এবং মানুষের সাথে সম্পর্ক মজবুত হবে।
৯। খেলাধুলা বা হাটাহাটিঃ
যারা এই আর্টিকেলটা পড়তেছেন তারা নিশ্চই ২/৩ বছরের শিশু নন। আপনি হয় কিশোর অথবা প্রাপ্ত বয়ষ্ক। কিশোরদের জন্য মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সবথেকে কার্যকর হচ্ছে বিকাল বেলা খেলাধুলা করা। আসলে মন সতেজ অ ফুরফুরা রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আপনি যখন কিশোর বা কিশোর ছিলেন তখন কিন্তু খেলাধুলা না করলে পড়ায় মন বসত না। অনেকেই হয়ত খেয়াল করে থাকবেন। যেদিন খেলাধুলা করা হয় সেদিন পড়ায়ও মন বসে। তাই মন অ মস্তিষ্ক সতেজ রাখতে কিশোর-কিশোরিদের জন্য খেলাধুলা খবই জরুরী। এখন ভাবছেন যাদের আশেপাশে মাঠ নেই তারা কি করবে। তারা তাদের আশেপাশে পার্কে বা নদীর ধার থাকলে সেখানে গিয়ে বিকালবেলা গুরাফেরা করতে পারে। এতে প্রকৃতির সজীবতা মন ও মস্তিষ্ককে সতেজ করে দিবে। আর বয়স্কদের জন্য তো হাঁটা চলা করাই উত্তম।
১০। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণঃ
আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারা ধর্মীয় কাজ-কর্মে অংশগ্রহণ করতে পারি। আমাদের আত্মার প্রশান্তিতেও আমাদের মস্তিষ্কে সজীব থাকে। কারণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন মানুষের মনের ভিতর থেকে চিন্তা ভাবনা কিছু সময়ের জন্য হলেও দূর করে দেয়। তাই অনেকের মতেই ধর্মীয় অনুভুতি মন ও মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী।
আরো অনেক টিপস আছে যেসব ধারা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায়। আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে যতটুকু ধরেছে ততটুকুই লেখার চেষ্টা করেছি।
ধন্যবাদ।
No comments