থ্যালাসেমিয়াঃ লক্ষণ, কারণ, প্রকারভেদ, প্রতিকার, প্রতিরোধ

থ্যালাসেমিয়া

থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে উত্তরাধিকারী সূত্রে পাওয়া একটি রক্তব্যাধি যা শরীরে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন তৈরী করে। হিমোগ্লোবিন হচ্ছে লোহিত রক্তকোষের মধ্যে থাকা প্রোটিন অনু যা শরীরে অক্সিজেন বহন করে।
ওই রোগের ফলে শরীরে লোহিত রক্তকোষ ধ্বংস হতে থাকে, এতে অ্যানিমিয়া নামক ব্যাধি দেখা দেয়। শরীরে সুস্থ ও স্বাভাবিক লোহিত রক্তকোষের ঘাটতিকেই অ্যানিমিয়া বলে।
থ্যালাসেমিয়া উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটি রোগ। বাবা-মার মধ্যে কেঊ যদি এই রোগের বাহক হন তবেই সন্তানের মধ্যে এই রোগ দেখা দিবে।

প্রতিবছর পৃথিবীতে প্রায় ৩২০০০০ শিশু জন্ম গ্রহন করে যারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আমাদের দেশে প্রায় ১৪০০০ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু জন্ম গ্রহণ করে। দিন দিন এই রোগের বয়াবহতা বেড়েই চলেছে। এই জন্য ৮ই মে কে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
thalassemia

বিশেষজ্ঞরা বলেন বিবাহের পূর্বের সামী-স্ত্রীর রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এতে বোঝা যাবে যে তাদের আগামীতে যে সন্তান জন্ম নিবে সে  এই রোগে  আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। ইদানিং এটি একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দারিয়েছে সবার সামনে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা প্রত্যেকটা পিতা-মাতারই দায়িত্ত ও কর্তব্য। তাই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দম্পত্তির সন্তান গ্রহনের পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণগুলো ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। কিন্তু কিছু কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো প্রায় সবার মধ্যেই দেখা যায়। যেমনঃ
১। হাড়ের বিকৃতি, বিশেষ করে মুখের মধ্যে।
২। প্রস্রাব সবসময় ঘাঢ় হলুদাব হওয়া।
৩। শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশে বিলম্ব হওয়া।
৪। খুব তাড়াতাড়ি অত্যাধিক ক্লান্ত হয়ে পরা।
৫। ত্বক হলুদ বা ফ্যাকাশে হওয়া ইত্যাদি।
সবার ক্ষেত্রে ছোট অবস্থায় থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে কিশোর বয়সে পদার্পণ করার পর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ

হিমোগ্লোবিন তৈরিতে যেসব জিন অংশগ্রহণ করে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা বা পরিবর্তন, পরিবর্ধন ইত্যাদি দেখা দিলে তখন থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর আপনার এই জিনগত সমস্যাটি আপনার পিতা-মাতার কাছ থেকে আপনার পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয়।
thalassemia
আপনার মা-বাবার মধ্যে কোনো একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে আপনি থ্যালাসেমিয়া মাইনরে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি হলে কোনো লক্ষণ দেখা দিবে না। কিন্তু আপনিও একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়ে যাবেন। আপনার বাবা-মা যদি উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন তাহলে আপনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবেন।

থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ

থ্যালাসেমিয়া প্রধানত তিন প্রকার। এই তিন প্রকারের মধ্যে আরো চারটি উপভাগ আছে।
১। বিটা থ্যালাসেমিয়া
২। আলফা থ্যালাসেমিয়া
৩। থ্যালাসেমিয়া মাইনর

বিটা থ্যালাসেমিয়া

বিটা থ্যালাসেমিয়া তখনই হয় যখন আপনার শরীর বিটাগ্লোবিন উৎপন্ন করতে ব্যর্থ হয়।

বিটা থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণগুলোঃ

১।ম্লানতা দেখা যাওয়া।
২। ঘন ঘন ইনফেকশন হওয়া।
৩।খাওয়ার ইচ্ছা না হওয়া।
৪। মানসিক ও শারীরিক বিকাশ লাভ না হওয়া।
৫।জন্ডিস হওয়া। এর ফলেই সাধারণত ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়।
৬। হাড় প্রসারিত হওয়া।

বিটা থ্যালাসেমিয়ার আবার দুই প্রকার রয়েছে।

থ্যালাসেমিয়া মেজর


এই টাইপের থ্যালাসেমিয়া হলে রোগীকে কিছু দিন পর পর নিয়মিত রক্ত দিতে হয়।
থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমেডিয়া

এই টাইপের থ্যালাসেমিয়া হলে রোগীকে কিছু দিন পর পর নিয়মিত রক্ত দিতে হয় না। এটি থ্যালাসেমিয়া মেজর থেকে কম মারাত্মক।

লফা থ্যালাসেমিয়া

আলফা থ্যালাসেমিয়া তখনই দেখা যায় যখন শরীরে আলফাগ্লোবিন উৎপন্ন হয় না। এর লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হলঃ

১। অতিরিক্ত রাগ হওয়া
২। জন্ডিস হওয়া।
৩। অপুষ্টিতে ভোগা।
৪। গাল, কপাল ও চোয়াল অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া।

আলফা থ্যালাসেমিয়া আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে।

১। হিমোগ্লোবিন এইচ।               ২। হাইড্রপস ফিটেইলস।

থ্যালাসেমিয়া মাইনর

এই টাইপের রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এই ধরনের থ্যালাসেমিয়া ধারা আক্রান্ত রোগীদেরকে সাধারণত বাহক বলা হয়। তারা সাধারণত কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় না।

থ্যালাসেমিয়ার প্রতিকার

যদিও থ্যালাসেমিয়ার পুরোপুরি প্রতিকার নেই। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা যায়। বিভিন্ন ধরনের থ্যালাসেমিয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। আপনার ডাক্তারই আপনাকে সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসা বলে দিতে পারবেন। 
তবে কিছু জিনিস মেনে চলা যেতে পারে। যেমনঃ
১। ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলা।
২। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা।
৩। লো-ফ্যাট খাবার খাওয়া।
৪। অধিক আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া ইত্যাদি।
Protected by Copyscape

No comments

Powered by Blogger.